Home Featured Updates মণিপুরঃ র‍্যাডিকাল সোশ্যালিস্টের বিবৃতি

মণিপুরঃ র‍্যাডিকাল সোশ্যালিস্টের বিবৃতি

Details
Published on Sunday
23 July 2023 02:04
Written by Radical Socialist

আজ একথা পরিষ্কার যে ২৭শে মার্চ মণিপুর হাইকোর্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়কে (অধিকাংশই হিন্দুদের) তপশীলী উপজাতির স্বীকৃতি দিতে রাজি হওয়ার ফলে মে মাসের গোড়ায় জো-কুকিদের গণ প্রতিবাদ শুরু হয়, যার ফলে আবার মেইতেইদের সশস্ত্র গোষ্ঠীরা হিংস্র আক্রমণ শুরু করে, এবং যা সব পক্ষের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটায়, কিন্তু যাতে প্রধান আক্রান্ত হন কুকিরা। এর অন্যতম প্রধান কারণ হল, শাসক বিজেপি সরকার এবং মুখ্যমুন্ত্রী বীরেন সিং নানাভাবে মেইতেইদের পক্ষ নিয়েছে। নিম্নলিখিত বিষয়গুলি ভেবে দেখা দরকারঃ 

১। মেইতেইদের তপশীলী উপজাতি বলে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রধান কারণ (যদিও একমাত্র নয়) হল জমির প্রশ্ন। কুকিরা থাকে অধিকাংশ পাহাড়ি এলাকায়, যা এই রাজ্যের ৯০% এবং যার অনেকটাই বনাঞ্চল, এবং এই জমি তাঁদের পূর্বপুরুষের জমি বলে মনে করা হয়, তাই সরকারও এর উপর সহজে হাত দিতে পারে না, যদিও তারা সেই চেষ্টা করেছে, খেয়ালখুশিমতো “সংরক্ষিত বনাঞ্চল” ঘোষণা করে। এর দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য হল ভারতীয় বড় পুঁজির, অর্থাৎ আমবানী, আদানী প্রভৃতির সঙ্গে সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগের পথে এই এলাকার খনিজ ও বনজ সম্পদ শুষে নেওয়া।  

২। জাতিগত, ধর্মীয় এবং জনসংখ্যাগত উপাদানও এখানে ভূমিকা পালন করে। অর্থনৈতিক দিক থেকে, মেইতেইদের তপশীলী উপজাতির স্বীকৃতি দিলে তারা ও সরকার পাহাড়ি এলাকায় জমি আদায় করতে পারে। রাজনৈতিকভাবে, বিজেপি জানে যে উত্তরপূর্বাঞ্চলে তাদের খৃষ্টানদের সঙ্গে বাস করতে হবে, কিন্তু তারা চায়, রাজনৈতিকভাবে, শুধু কেন্দ্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাভিত্তিক মৈত্রীজোটের মাধ্যমে খৃষ্টান, দল ও গোষ্ঠীদের অধীনস্থ রাখতেই নয়, বরং শেষ পর্যন্ত যথাসম্ভব তাঁদের রাজনৈতিক প্রভাব ও সামাজিক ক্ষমতা কমিয়ে দিতে। এখানেই এক ক্রমবর্ধমান সংখ্যক কুকিদের বে-আইনী অভিবাসী বলে দেখানোর তাৎপর্য, কারণ কুকিদের সঙ্গে মায়ানমারের চিন উপজাতিদের সম্পর্ক আছে, এবং সীমান্তের এপারে-ওপারে বাণিজ্য ও মানুষের চলাচল চলে। মেইতেইদের মধ্যেও খৃষ্টান আছেন, এবং জাতিগত টান ও ধর্মীয় হিংসা দুটো কীভাবে ছিল, সেটা দেখা গেল ৩-৪ মে-র সবচেয়ে হিংস্র রাতগুলিতে, যখন একজনও মেইতেই খৃষ্টানকে হত্যা করা হয় নি, কিন্তু ইম্ফলে বা তার আশেপাশে যেখানে সচ্ছল এবং সরকারী চাকুরে কুকিরাও বাস করেন, সেখানে তাঁদের ৫০টির মতো গীর্জার সঙ্গে সঙ্গে মেইতেইরা যে বিভিন্ন মতের খৃষ্টান, তাঁদেরও ২৪০টির মতো গীর্জা ধ্বংস করা হয়েছিল। সন্ত্রস্ত কুকিরা উপত্যকা ছেড়ে পার্বত্য এলাকাতে চলে গেছেন, এবং মেইতেইরাও উল্টোদিকে রওনা হয়েছেন।  

৩। কেন্দ্রে এবং মণিপুরে বিজেপির সরকার, এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত পুলিশের কপট ব্যবহার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। (ক) প্রথমের হিংসাত্মক ঘটনাগুলি ঘটার অনেক পরেও, বীরেন সিং-এর সরকার ১৭ই মে সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিল, এই হিংসার সূত্রপাত “ মায়ানমার থেকে বে-আইনী অভিবাসনের উপর এবং পাহাড়ি এলাকায় মাদকের ব্যবসার উপর কড়া ব্যবস্থা নেওয়া” থেকে। ২৮শে মে বীরেন সিং আবার মিথ্যা বলেন, যে সংঘাত দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে না, বরং “কুকি জঙ্গীদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীদের”। আরাম্বাই টেঙ্গোল ও মেইতেই লীপান, দুটি বড় সশস্ত্র মেইতেই গোষ্ঠী যাদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের নিবিড় সম্পর্ক আছে মনে করা হয়, তাদের ভূমিকা কোথাও উল্লেখ করাই হয় নি। পুরে, লীপানের নেতার বিরুদ্ধে পুলিশ সম্ভাব্য অপরাধের জন্য তদন্ত করে, কিন্তু কোনো সংগঠনকেই নিষিদ্ধ করা হয় নি। (খ) এই অবস্থা সত্ত্বেও কেন রাষ্ট্রপতির শাসন জারী করা হয় নি? কেন মোদী এতদিন নীরব? উত্তরটা সহজ। রাজ্যে বিজেপির সরকার, আর কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কীভাবে নিজেদের দল পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে এইরকম পদক্ষেপ নেবে? তাহলে তো  তারা যে মেইতেইদের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে সেটাকেও নিন্দা করা হয়। কোনো আশ্চর্যের কথা নয়, যে এই মোদী সরকার, দেশের মধ্যে গীর্জা ধ্বংস করা নিয়ে নীরব ছিল, অথচ অস্ট্রেলিয়াতে নাকি হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে, এই নিয়ে চিল চীৎকার করেছিল।

৪। মে মাসের গোড়ার দিকে কুকিদের ধর্ষণ ও খুন করার যে ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছিল, সম্প্রতি তার ভিডিও বেরিয়ে আসার ফলে বিজেপির উপর চাপ পড়েছে। এই কারণে, এতদিন পরে মোদী এই প্রথমবার মণিপুর নিয়ে কথা বলেছেন। যে তথ্যগুলি আমাদের মনে রাখা দরকার, তা হল, আক্রান্তদের পুলিশের হাত থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেটা কীভাবে হল? কেন তারপর তা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হল না? পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হল, ১৮ই মে এফ আই আর করা হল, অথচ তদন্ত আরম্ভ হল ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে। মনে রাখা ভাল, পুলিশ রাজ্য সরকারদের অধীনে, আর বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকাররা সজাগ থাকে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কি চায় সেটা নিয়ে।

৫। স্পষ্টতই, মেইতেই এবং কুকিদের মধ্যে সম্পর্ক এমন একটা স্তরে পৌঁছে গেছে, যেখানে পারস্পরিক সমন্বয়সাধন সম্ভব কেবল মেইতেইদের তপশীলী উপজাতি স্বীকৃতি (যা ইতিমধ্যেই সাংবিধানিকভাবে অতীব সন্দেহজনক বা এমনকি অন্যায্য বলে স্বীকৃত) আইনীভাবে প্রত্যাহার করে, এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ, স্বতন্ত্রভাবে প্রশাসিত ভৌগোলিক এলাকা, যার থাকবে যথেষ্ট ক্ষমতা (নিজস্ব পুলিশ বাহিনী সহ) প্রতিষ্ঠা করার জন্য কুকিদের দাবী মেনে নিয়ে। এই ধরণের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল নির্মাণের সময়ে নাগাদের বৈধ আঞ্চলিক চিন্তার কথাও মাথায় রাখতে হবে। এখানে, সরকারের ‘এমিনেন্ট ডোমেন’ তত্ত্বের নামে জমি অধিগ্রহণের অধিকারের বিরুদ্ধে জো-কুকি জনগণের অধিকাংশের ইচ্ছার প্রতি মান্যতা দিয়ে জমির অধিকার (জঙ্গলের অধিকার সহ) রক্ষা করতে হবে।  

৬।শুধু মণিপুর নয়, জম্মু ও কাশ্মীরে, নাগাল্যান্ডে, মিজোরামের কোনো কোনো অঞ্চলে, বিজেপির শাসনে যে প্রবল তোলপাড় চলছে সেটার মূল কারণ বোঝা কঠিন নয়। শুধু বিজেপি নয়, অন্য দল চালিত কেন্দ্রীয় সরকাররাও ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয়তার অপ্রতিসাম্য ধ্বংস করতে চেয়েছে, যেখানে সেটা বাঁচিয়ে রাখা জরুরী। এর কারণ হল, ঔপনিবেশিকতাবাদ বিভিন্ন অঞ্চল, বিবিধ ধরণের মানুষের উপর পাশবিক অত্যাচার করে এই ভৌগোলিক একক গঠন করেছিল, যাকে স্বাধীনতার পর আমরা ভারত বলছি। ঔপনিবেশিকতার অবসানের পর সব সরকার একে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছে, অনেক সময়ে স্বতন্ত্র ইতিহাস আছে এমন বিভিন্ন এলাকার ও মানুষের সংযুক্তিকরণ ঘটিয়ে। একটি মানবিক ও প্রকৃতই গণতান্ত্রিক ভারত গড়ার কোনো চেষ্টা করতে হলে একটি অপ্রতিসাম্য সম্বলিত যুক্তরাষ্ট্রীয়তাকে মানতে হবে, যা ওই বিবিধ ইতিহাস, মানসিকতা ও অধিকারকে স্বীকার করবে। ভারতের যে দুটি অঞ্চলে নির্দিষ্ট ও বিশেষ স্বায়ত্ত্ব ছিল, তারা হল একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর, এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি, যেখানে এক উল্লেখযোগ্য খৃষ্টান জনসংখ্যা আছে, যেটা কোনো কোনো রাজ্যে গরিষ্ঠ সংখ্যক। এই অপ্রতিসাম্যভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রীয়তা কমাতে ও শেষ অবধি লোপাট করতে এবং এমন এক কেন্দ্রীয় আধিপত্য আনতে কারা চায়, যাতে অন্য ভারতীয় রাজ্যদের চেয়ে এই রাজ্যগুলির যে বেশি স্বায়ত্ত্ব আছে তার পায়ের তলা থেকে জমি কেড়ে নিতে কারা সবচেয়ে বেশি চাইছে? অবশ্যই সঙ্ঘ পরিবার/বিজেপি, কারণ তাদের দিশাই হল হিন্দু জাতীয়তাবাদ।

৭। আমরা দাবী করছি, যারা কোনোভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, নিরপেক্ষভাবে তাদের শাস্তি দিতে হবে।

র‍্যাডিকাল সোশ্যালিস্ট – ২১ জুলাই, ২০২৩

 

  •  
  •  
  •  
RELATED ARTICLES

Radical Socialist Statement on Ban on PFI and its associate organisations

Details Published on Thursday 29 September 2022 02:03 Written by Radical Socialist

Radical Socialist Statement on the Legalisation of the EWS Quota

Details Published on Tuesday 08 November 2022 14:07 Written by Radical Socialist

Radical Socialist Statement on The Karnataka Verdict and the Future

Details Published on Sunday 14 May 2023 09:51 Written by Radical Socialist

Most Popular

An open letter to Rahul Pandita [Kashmir Vale]

Details Published on Saturday 26 January 2013 06:15 Written by Radical Socialist

The Egyptian Mirror

Details Published on Wednesday 09 February 2011 15:37 Written by Radical Socialist The Egyptian mirror By Glenn Greenwald AP President Barack Obama meets with Egyptian President Hosni Mubarak in the White...

MOROCCO: A football victory does not erase the Hogra

Details Published on Friday 01 January 2023 09:15 Written by Radical Socialist Jawad Moustakbal of CADTM Morocco was interviewed by Éric Toussaint. On Sunday 4 December 2022, a...

Pakistan: workers, peasants take lead to revive a political tradition

Details Published on Saturday 06 February 2010 16:10 Written by Radical Socialist Abdul Khaliq Lahore, 2nd February 2010 Despite prevailing fear of everyday explosions and suicide bombings across Pakistan, over 10,000...

Tunisia and the Arab Revolution

Details Published on Monday 14 February 2011 16:41 Written by Radical Socialist TUNISIA AND THE ARAB REVOLUTION Osvaldo Coggiola After 40 days of mobilisation and with over a hundred people...

Race, surveillance, and empire

Details Published on Saturday 30 May 2015 10:43 Written by Radical Socialist Arun Kundnani and Deepa Kumar (originally published in International Socialist Review)   Beginning in June 2013, a series of...

Fourth International on Thailand

Details Published on Thursday 20 May 2010 17:55Written by Radical Socialist

The role of the left in Syriza

Details Published on Friday 31 May 2013 15:26 Written by Radical Socialist The role of the left in Syriza Monday 27 May 2013, by Sotiris Martalis   This contribution was made by...

The Political Foundations for a New Revolutionary Organization in France

Details Published on Sunday 01 January 2023 09:37 Written by Radical Socialist

Pakistan: AWP founded: Will it sustain itself?

Details Published on Saturday 22 December 2012 15:13 Written by Radical Socialist AWP founded: Will it sustain itself? Tuesday 11 December 2012, by Farooq Tariq The merger of three left wing...